বাংলাদেশের সাইক্লিং ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত অভিযান। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া। সাইকেল চালিয়ে দেশ ভ্রমনের শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল এই রুটে সাইকেল চালানো। কিন্তু যাই যাই করেও হয়ে উঠে নি। ২০১৫ তে এসে মনে হল দেশের অনেক জেলার অনেক রুটে চালানো হয়ে গেছে। কয়েকটা রুটে একাধিকবার ও। এই রুটে এখন না গেলে আর কবে?
উত্তরসূরি যারা গিয়েছেন তারা ৩ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই পথে চালিয়েছেন। আমিও ধীরে চলো নীতিতে বিশ্বাসী। তবে এমন একটা কিছু করতে যাচ্ছি তা আগে সম্ভবত কেউ করে নি। ট্যানডেম সাইকেল (২ জন একসাথে চালাতে পারে, এমন সাইকেল) নিয়ে আমি এই পথ টুকু পাড়ি দিব। এই রুট প্রায় ১০০০ কিলো মিটার এর মত। পুরো পুরি উত্তর থেকে দক্ষিন এর হাইওয়ে না ধরে কিছুটা অপ্রচলিত রাস্তা ধরে ও চালানোর আশা রাখছি। নির্ভর করছে রাস্তার অবস্থা, আবহাওয়া আর শারীরিক সুস্থতার উপর।
ট্যানডেমটা এই ট্রিপ এর জন্য ধার দিয়ে আজীবন কৃতজ্ঞ করে রাখছেন, নাহিদ ভাই। ভেলোস রেসিং টিমের কোচ, সাবেক ন্যাশনাল সাইক্লিং চ্যাম্পিয়ন। এ ছাড়া ও সাইকেল লাইফ এক্সক্লুসিভ এর জিএম তমাল ভাই, মার্কেটিং ম্যানেজার রাহাত ভাই যারা আমার সাইকেল টুর নিয়ে সব সময় উচ্ছস্বিত প্রশংসা করেন। এবং যাদের কাছে আমি এই ট্রিপের জন্য শুধু একটি ট্যানডেম ধার হিসেবে চেয়েছিলাম অনেক দিন আগে। তাদের শেষ ট্যানডেমটিও কিছুদিন আগে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। কিন্ত উনারা আমাকে হতাশ করেন নি। কোচ নাহিদ ভাই কে বলে আমার জন্য ট্যানডেমটি এই ট্রিপটি করার জন্য ব্যবস্থা করে দেন। এখন শুধু দিনাজপুর গিয়ে সাইকেল টি নেয়া এবং বাংলাবান্ধা গিয়ে শুরু করার অপেক্ষা।
এই ট্রিপ টি শুরু করার আগে আমার ট্রিপমেট দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। ৩ জন যাচ্ছি এবার। সাথে আমার সাইকেল টিও নিচ্ছি। ট্যানডেম একটানা চালানো বিরক্তিকর মনে হতে পারে, তাই ৩ জনের কম্বিনেশন। ১ম জন – রিফাত হাসান। বাচ্চা ছেলে । সদ্য ভার্সিটিতে প্রবেশ করা বরিশালের ছেলে। থাকে চট্টগ্রাম। পরিচয় এডভেঞ্চার ক্লাব অফ চিটাগাং (ACC) এর গুরু জাফর বেগের মাধ্যমে বছর ২ আগে। ব্যবসার প্রয়োজনে আমাকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে রিফাত। অনেকেই জানে রিফাত আমার খালাতো ভাই বা এই টাইপ কোন রক্ত সম্পর্কীয়! আমার যে কয়টা অন্ধ ভক্ত তার মধ্যে রিফাত অন্যতম। খুব ভাল ছেলে,ভাল বন্ধু।
আরেক জন হিমেল ইমতিয়াজ। ডাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় এ বিবিএ পড়ছে। খুব ই অন্তর্মুখী মানুষ। বছর ২ আগে যার সাথেই দেখা হত সাইকেল নিয়ে তাকেই জিজ্ঞাসা করত, “ এমন কেউ কি আছে যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সাইকেল চালিয়ে যায়?” এভাবে খুজতে খুজতে একদিন সাইকেল হাবের মিনহাজদের মাধ্যমে পরিচয় হয় হিমেলের সাথে। আমি সবচেয়ে বেশী সাইকেল চালিয়েছি এই ছেলেটার সাথে গত অনেক গুলো ট্রিপে। এই যুগে ওর মত সৎ ,ভদ্র, পরিশ্রমী ছেলে আমি খুব কম দেখেছি। যে কোন ট্রিপে সবার আগে ঘুম থেকে উঠা, আমাকে জাগানো!, চুপ চাপ বসে বসে চার পাশ পর্যবেক্ষন এই ওর কাজ। কখনো কোন ব্যাপারে অভিযোগ করে না। আমি ই ওর কাছ থেকে প্রতিনিয়ত অনেক কিছু শিখি।
ওহ! এদের ২ জনের একটা কমন মিল আছে। ২ জন ই দেদার মিষ্টি খেতে পারে! এই ব্যাপারে আমাদের জুড়ি এদেশে নাই ই বলা চলে! সাইকেল চালিয়ে দেশের আনাচে কানাচের বাজারগুলোর মিষ্টি ভক্ষণকে আমরা প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি।