মঙ্গলবার, মার্চ ২, ২০২১
রাইডার্সপেন
  • প্রথমপাতা
  • গ্যারেজ
    • মেকানিক টুকিটাকি
    • সাইকেল শপ
    • সাইকেল রিভিউ
    • সাইকেল গুরু
  • লাউঞ্জ
    • পাঠকের গল্প
    • সাইকেল চিরকুট
    • সাইকেল কমিউনিটি
  • বাইকট্যুরিং
    • বাইকট্যুরিং বাংলাদেশ
    • বাইকট্যুরিং আন্তর্জাতিক
    • ট্যুর রুটপ্ল্যান
    • ক্রসকান্ট্রি বাংলাদেশ
    • ক্রসকান্ট্রি আন্তর্জাতিক
  • স্পোর্টস
    • সাইকেল রেস
    • ষ্ট্যান্ট
    • সাইক্লিং বিচিত্রা
  • প্রিয় সাইক্লিষ্ট
  • আমরা
No Result
View All Result
আপনিও লিখুন
  • প্রথমপাতা
  • গ্যারেজ
    • মেকানিক টুকিটাকি
    • সাইকেল শপ
    • সাইকেল রিভিউ
    • সাইকেল গুরু
  • লাউঞ্জ
    • পাঠকের গল্প
    • সাইকেল চিরকুট
    • সাইকেল কমিউনিটি
  • বাইকট্যুরিং
    • বাইকট্যুরিং বাংলাদেশ
    • বাইকট্যুরিং আন্তর্জাতিক
    • ট্যুর রুটপ্ল্যান
    • ক্রসকান্ট্রি বাংলাদেশ
    • ক্রসকান্ট্রি আন্তর্জাতিক
  • স্পোর্টস
    • সাইকেল রেস
    • ষ্ট্যান্ট
    • সাইক্লিং বিচিত্রা
  • প্রিয় সাইক্লিষ্ট
  • আমরা
No Result
View All Result
রাইডার্সপেন
No Result
View All Result
Home ক্রসকান্ট্রি বাংলাদেশ

তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ অভিযান এর ডায়েরি

রাইডার্সপেন সম্পাদক by রাইডার্সপেন সম্পাদক
জুন ১০, ২০১৬
in ক্রসকান্ট্রি বাংলাদেশ
0
0
SHARES
13
VIEWS
ShareTweetSend

স্বপ্নটা অনেক দিন ধরেই মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছিল। সময়-সুযোগ পেতেই বেরিয়ে পড়লাম তেঁতুলিয়া-টেকনাফ অভিযান এ – সাইকেলে সারা বাংলাদেশ ঘোরার স্বপ্নপূরণের প্রথম পদক্ষেপ।
হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত। অত তাড়াহুড়োয় বড় কোন ক্লাবের সহায়তা পাইনি বটে, তবে পুরো অভিযানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নূর মহম্মদ ভাই আমার সাথে থেকে সাহস জুগিয়েছিলেন। সম্পূর্ণ পরিকল্পনা আর তার সঠিক বাস্তবায়নের পুরো কৃতিত্বই উনারই। শুধু নূর ভাইই নন, কারিগরি সহায়তা আর মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন সেইফ-এর সহকর্মীরা। লম্বা সফরের জন্য ভালো একটি সাইকেলও প্রয়োজন। রাসেল ভাই উনার নতুন সাইকেলটা নিয়ে হাজির হলেন। পকেটমানি ধরিয়ে দিলেন বাবুল ভাই, নূর ভাই, শামীম ও নাসিমা আপু। ছয় রাত থাকার ব্যবস্থাও হয়ে গেল নানাজায়গায়। একা একা এতটা পথ সাইকেলে চড়ে যাব, সবার চিন্তা শুধু এটাই। শামীম আর নূর ভাই বললেন, দু-তিনঘন্টা পরপরই আমার খোঁজখবর নিবেন। সবার শুভেচ্ছা নিয়ে অবশেষে বেরিয়ে পড়লাম অজানা পথে – একা একা এই প্রথম।

রাইডার্সপেন - Riderspen অভিযান

২১ অক্টোবর, ২০১১
বিকাল ছয়টায় বাস ছাড়ল গাবতলী থেকে। সাইকেলটা বাসের ছাদে ভাল মত বেঁধে দিয়ে এই অন্যরকম যাত্রায় আমাকে বিদায় জানালেন নূর ভাই।

২২ অক্টোবর, ২০১১
সকাল ৫:৩০ মিনিটে বাস পৌঁছালো তেঁতুলিয়ায়। আমার যাত্রা শুরু হবে বাংলাবান্দার জিরো পয়েন্ট থেকে – তেঁতুলিয়া থেকে ১৭ কিলোমিটার ভেতরে। ছয়টায় রওনা দিলাম। রাস্তাটি অসাধারণ। খুব ঠাণ্ডা। হাতের বাঁদিকে মহানন্দা নদী বয়ে যাচ্ছে তার ঐ পাড়েই ভারত। দূরে পাহাড়ের গায়ে দেখা যাচ্ছে শিলিগুড়ির ঘর-বাড়ি। তার পেছনে কাঞ্চনজঙ্ঘা। সাদা পাহাড় এই প্রথম দেখলাম, একমুহূর্ত মনে হল ওখানে চলে যাই। এসব ভাবতে ভাবতেই বিজিবি ক্যাম্পে থামতে হল। কোন প্রশ্ন করার আগেই এক বিজিবি সৈনিককে আমার পরিচয় দিলাম। ৬:৩০ আর ৯:৩০ এর দিকে গার্ড যাবে জিরো পয়েন্টের দিকে। একা আমাকে যেতে দেওয়াটা বিপদের, যদি আমি ভারতের ভিতর ভুল করে চলে যাই। তবু কী মনে করে সে আমাকে যেতে দিল। বাংলাবান্দা জিরো পয়েন্ট। ছবি তুললাম, মিটার সেট করলাম।

ঠিক ৭:০০ টায় শুরু হল আমার তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ সফর। ২কিমি পর ক্যাম্প অতিক্রম করে চলে এলাম তেঁতুলিয়ার জিরো পয়েন্টে। এখান থেকে আমার আসল যাত্রা শুরু। তেঁতুলিয়া বাজার থেকে সকালের নাস্তা সেরে রওয়ানা হয়ে গেলাম পঞ্চগড়ের দিকে। ৩ ঘন্টা ২২ মিনিট খুব সুন্দর রাস্তা ঠাণ্ডায় ঠাণ্ডায় অতিক্রম করে পঞ্চগড় শহরে পৌঁছোলাম তখন আমার মিটার বলছে ৫৭ কিমি হয়েছে। আমার প্রথম দিনের ঠিকানা হল দিনাজপুর, চিরিরবন্দর বাসুদেবপুর গ্রামে যেখানে আমার খুব কাছের বন্ধু বাতেনের বাড়ি। আঙ্কেল আন্টি থাকেন সেখানে, বন্ধু থাকে ঢাকায়। ঠাকুর গা পৌঁছাতেই দুপুর হয়ে গেল। সেখানেই দই, ডিম, পরোটা দিয়ে পেট পুজো করে নিলাম। ১০৬ কিমি হয়ে গেল ঠাকুর গা জেলা অতিক্রম করতে করতেই। আরও অনেকটা পথ বাকি। দেশের এই ভাগটাতে প্রায় সবারই সাইকেল রয়েছে। আর তাঁদের অনেকেই সঙ্গী হলেন প্রায় সারা পথ ধরেই। তাই আসলে একা হয়েও একলা ছিলাম না আমি। যেখানে নাস্তা বা পানি পান করার জন্য থামতাম সেখানে কৌতুহলী পথচারীরা আমাকে ঘিরে ধরতেন আর কেন এই পথযাত্রা তা জানতে চাইতেন। কেউ কেউ আবার পথ আটকে দিতেন কুশল বিনিময় করতে। এভাবেই ১৭১ কিমি অতিক্রম করে সন্ধ্যার দিকে পৌঁছোলাম বন্ধুর বাসায়। ফ্রেশ হয়ে হাত পা ম্যাসাজ করে ভরপেট খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরলাম।

২৩ অক্টোবর, ২০১১
সকালের নাস্তা খাইয়ে বিদায় জানালেন আন্টি আর আঙ্কেল। সহজ একটি পথ দেখিয়ে দিয়ে আমাকে সাহায্যও করলেন। বাসুদেবপুর, দিনাজপুর শহর থেকে ১৭ কিমি ভেতরে। গ্রামের ভেতর দিয়ে কুতুবডাঙ্গা ও উচিৎপুর হয়ে বগুরা যাবার রাস্তায় উঠলাম। সকাল ৮:৩০ মিনিটে যাত্রা শুরু করে ১১:২৬ এ বিরামপুর পৌঁছলাম। রাস্তার দুইপাশে হেমন্তের মাঠে মাঠে সোনার ধান ভরে আছে। কেউ কেউ আবার ধান কেটে ঘরে তুলছেন। খুবই সুন্দর মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে বিরামপুর পার হয়ে গোবিন্দগঞ্জ পৌঁছলাম প্রায় ৩টার দিকে। এখানে সাইকেলের মিটারে একটু সমস্যা ধরা পরেছিল। আসলে ব্যাটারি লুজ কানেকশন হওয়াতে বিরামপুরে ৬০ কিমি বেশি রিড করেছিল আর গোবিন্দগঞ্জে এসে মিটার বন্ধই হয়ে গেছে। তবে ভাগ্য ভাল, কারণ সবসময় আমি মিটার সহ কোথায় এলাম তার ছবি তুলে রাখতাম এবং লগ বুক মেনটেইন করতাম। সেই ক্ষেত্রে গোবিন্দগঞ্জে ৩২৭ কিমি ছিল তার থেকে ৬০ কিমি বাদ দিয়ে তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্দা থেকে গোবিন্দগঞ্জ হল ২৬৭ কিমি। তাই গোবিন্দগঞ্জ থেকে টেকনাফ যা হবে তার সাথে ২৬৭ কিমি যোগ করলেই মোট দূরত্ব পাওয়া যাবে। আজ মোটামোটি ৯৬ কিমি চলে এলাম। আরো ৪০ কিমি বাকি বগুড়া পৌঁছোতে। আজ রাত্রি থাকার জায়গা হল বগুড়ায়, আকরাম ভাইয়ের বাসায়।
ফেসবুকেই আলাপ আকরাম ভাইয়ার সাথে। প্রথম দেখায় খুবই আপন করে নিলেন আমাকে। করতোয়া নদীর উপরে ছোট একটি ব্রীজ পার হয়ে বিকাল ৪.৫০ মিনিটে বগুড়া শহরে প্রবেশ করার পথে দেখতে পেলাম সাইনবোর্ডে ডানে ১ কিমি ভিতরে বেহুলার গড়। এত কাছে চলে এসেছি তাই মিস করতে ইচ্ছে করল না। একটু ঘুরে এলাম সেখান থেকে। ঠিক ৬ টার দিকে নিমতলা, কৈগাড়ি রোডে আকরাম ভাইর বাসায় এসে পৌঁছোলাম। আজ চালালাম ১৩৭ কিমি। ক্লান্তি তেমন একটা ছিল না তবে বরাবরের মতোই পা একটু ব্যথা ছিল। ফ্রেশ হয়ে একটু ম্যাসাজ করায় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসেই দেখি আমার জন্য অনেক নাস্তা রেডি। নাস্তা সাবাড় করে একটু রেস্ট নিয়ে ৯ টায় চলে গেলাম আকরাম ভাইর অফিসে। সেখানে একটি পার্টি ছিল বলে রাতের খাবারটা ওখানেই জুটল। তাদের সবার অনেক বাহবা কুড়ালাম আমার এই ট্যুর নিয়ে। পরিশ্রান্ত হওয়াতে বিছানায় পরতেই ঘুমিয়ে গেলাম।

২৪ অক্টোবর, ২০১১
সকাল ৬ টায় এলার্ম বাজল। বিছানা ছেড়ে রেডি হলাম নতুন একটি দিন নতুন পথ নতুন গন্তব্যের দিকে। আজ যাব ঢাকায়, আমার বাসায়। প্রায় ২১৩ কিমি। তাই ৭ টায় তড়িঘড়ি করে নেমে পড়ি পথে। কুয়াশায় ঢেকে আছে সব আর আমি সাইকেল নিয়ে ছুটলাম কুয়াশা চিরে। ঘন্টা খানেকের মধ্যেই চলে এলাম শেরপুর। সেখানে দেখতে পেলাম একটি ফলক যেখানে লিখা “নিরাপদ সড়ক চাই”আর

“দূরকে নিকট করে সড়ক,
মানুষে মানুষে সেতু বন্ধন ঘটায় সড়ক,
মানুষকে তার আশার সীমান্তে পৌঁছে দেয় সড়ক।
সেই সড়ক যাত্রায় তবে কেন দুর্ঘটনা মৃত্যু,
আপনার সড়ক যাত্রা নিরাপদ করুন।
এ দায়িত্ব আপনার আমার সকলের।“

আর লেখা ছিল এই স্থানে যাঁরা সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের নাম।
সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে চললাম আমার পথ ধরে। ৯.৩০-য় প্রায় ৪০ কিমি চালিয়ে পেলাম ফুড ভেলি হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট। সেখানে দই, পরটা দিয়ে নাস্তা সারলাম। ১১.৫৪- বঙ্গবন্ধু সেতু পৌঁছালাম। টোল ঘরে এসে থামতে হল। এই সেতু দিয়ে সাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ। কি আর করা যাবে তারা আমাকে একটি ট্রাকের  উপর তুলে দিলেন। সেতুটি এভাবেই পার হতে হল। সেতু পার হয়ে দেখলাম ১২.২০ বেজে গেছে, পথ বাকি প্রায় ১২৬ কিমি। তাই সময় নষ্ট করা যাবে না। এই পথটুকু খুবই ভাল ছিল তাই দ্রুতই চলতে পারলাম। টাঙ্গাইল ডানে রেখে বাঁয়ের পথে চলছি। কিছু দূরে যেতে চায়ের দোকান পেলাম। সেখানে একটু বিশ্রাম নিয়ে চাপকলের পানিতে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। পরে দুধ দিয়ে একটি বন খেয়ে নিলাম। আসলে পুরো যাত্রায় যখন যা পাচ্ছি তাই খাচ্ছি। কখনো ভরা পেটে এগোচ্ছি না। দেখতে দেখতে মির্জাপুর চলে এলাম। কিন্তু সময় হাতে খুবই কম। টাঙ্গাইল-এর কিছুপর রাস্তা অনেকটাই খারাপ হওয়াতে সময় অপচয় হয়েছে। খুবই ধীরে চলতে হয়। যাইহোক ঢাকায় ঢুকার দুইটা রাস্তার সামনে এসে পড়লাম। সোজা গেলে গীজাপুরের রাস্তা। এটা একটু খারাপ হওয়ায় ডানের পথ ধরলাম। একটু চলতে পরিচিত নন্দন পার্ক গেলাম। ভাবলাম ঢাকায় চলে এসেছি। কিন্তু পথ যে অনেক বাকি তা বুঝলাম একটু দেরিতে। গাড়িতে করে নন্দন যাওয়া আসা করেছি অনেক বার তাই ভাবতেও পারিনি এই পথ এত বড় হবে। আশুলিয়া পার হয়ে বেড়িবাধের রাস্তায় ঢুকতেই অন্ধকার হয়ে গেল। অনবরত ঘাসপোকা চোখে এসে লাগছে। যন্ত্রণাও শুরু হল। পথ চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল। টর্চটা ব্যাগ থেকে বের করে চলতে লাগলাম আল্লাহর নাম নিয়ে। হাহ্‌ মিরপুর চলে এলাম। ঢাকায় পৌঁছালাম ৭ টায়। একটু স্বস্তি ফিরে পেলাম।
ঢাকায় জ্যাম আমাকে সাদর আমন্ত্রণ জানালো আর নূর ভাই শাহবাগে। ৭:৩০ টায় তার সাথে কিছু সময় কাটিয়ে চলে এলাম বাসায় বেড়াতে। নিজের বাসায় বেড়াতে এই প্রথম এলাম। যাক গোসল করে কাপড় চোপড় নতুন করে ব্যাগে নিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। নিজ বাসা তার উপর মায়ের আদর, খুব ভালই ঘুম হল।

২৫ অক্টোবর, ২০১১
এত আরামে একটু দেরিই হয়ে গেল উঠতে। ২৫শের যাত্রা শুরু হল সকাল ১০ টায়। আজ সীমান্ত চৌদ্দগ্রাম মেঝভাবীর বাপের বাড়ি অবধি যাব। ঢাকা ছেড়ে কাচপুর, মেঘনা ও দাউদকান্দি ব্রীজ পার হয়ে গৌরীপুর চলে এলাম ১২: ৪৫ মিনিটেই। হালকা কিছু নাস্তা সেরে আবার চলা শুরু করলাম। বিগত দিনগুলো আকাশে প্রচুর মেঘ ছিল বলে খুব আরামেই চলছিলাম। ঢাকার দক্ষিণে আসতেই রোদের দেখা পেলাম তাই অনেক কষ্ট হচ্ছিল। কষ্ট ছাপিয়ে ময়নামতি পার হলাম ৩:৪৫ মিনিটে। সেখানে ছবি তুলতে যেতে, এক আর্মি আমাকে থামিয়ে দিয়ে ছবি তোলার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। আমার উদ্দেশ্য ও যাত্রার কথা শুনে উনার চোখ কপালে উঠল। বললেন, একি সম্ভব! সম্ভব কিনা তার প্রমাণ হিসেবে উনার সামনেই হাজির ছিলাম আমি।
ময়নামতি পার হয়ে চলে এলাম চান্দিনা। সেখানে পেটে খুব টান পরায় খেয়ে নিলাম দুপুরের খাবার। এখনও পর্যন্ত ঢাকা হতে ৭৬ কিমি চলে এসেছি আরও ৬০ কিমি বেশি পথ বাকি। খুব রোদ ছিল, বার বার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল। পানি, স্যালাইন খেয়ে নিচ্ছি একটু পর পরই। পথ টুকুও যেন আরও বড় মনে হচ্ছিল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল হাইওয়ে রোডে। লাইট বের করে পথ চলছি। আবার কয়েকটি ঘাসপোকা চোখে ঢুকে খুবই বিরক্ত করছে। যাক ৬ টার দিকে পৌঁছে গেলাম মেজু ভাইর শ্বশুর বাড়ি। সরবতের সাথে অনেক নাস্তা দিয়ে আপ্যায়ন করল আমাকে। রাতে মাছ, মাংস ও পোলাও-কোরমা – বিশাল আয়োজনে ভুরিভোজ হল। আজ মোট চললাম ১৩৯ কিমি। রাতে ঘুমিয়ে পরলাম ঝিঁঝিঁপোকার ডাক শুনতে শুনতে।

২৬ অক্টোবর, ২০১১
শীতের ভাব গ্রামে মোটামুটি চলে এসেছে তাই সকালে নাস্তা হল ভাপা ও পুলি পিঠা দিয়ে। নাস্তা সেরেই ৭টা ৫০ মিনিটে বেরিয়ে পরলাম চিটাগাংয়ের উদ্দেশে। দেখতে দেখতে ৮:৪০ মিনিটেই ফেনী চলে এলাম। শহরের রাস্তায় না ঢুকে সোজা পথ ধরে চললাম। আজ রোদ খুবই প্রকট ছিল তাই পানি পিপাসা একটু বেশি পাচ্ছিল। যাই হোক চলতে চলতে হাতের বাম পাশে ফেনী নদী পার হয়ে কিছু দূর যেতেই দেখা গেল ছোট ছোট পাহাড়। বুঝতে অসুবিধা হল না সীতাকুণ্ড বেশি দূরে নয়। পাহাড়ের প্রতি দুর্বলতা আছে অনেক আগে থেকেই। এখনো যেন চন্দ্রনাথ পাহাড় ডাকছিল বার বার। কিন্তু তার ডাকে সারা না দিয়ে সীতাকুণ্ড অতিক্রম করে চলে এলাম। সাড়ে ১২টা বাজে। মিটারে তখন ৪৫৯ কিমি। চিটাগাং আর বেশি দূরে নয় তাই একটু ধীরে ধীরেই চলছি। আজ একটু কষ্টই হচ্ছিল। চিটাগাং প্রবেশের সিটি গেটটি দেখা গেল ২টা ১০ মিনিটে। সেখান থেকে সুজা ভাইকে ফোন করে দিলাম। তাঁর বাড়ির লোকেশন জানালে খুব অল্প সময়ই চলে গেলাম কৈবল্যধাম মন্দিরের সামনে। সিটি গেট থেকে ২-১ কিমি পথ। মিটার বলছে মোট ৪৯৩ কিমি হল। অর্থাৎ আজ চললাম প্রায় ১০৯ কিমি, সময় লাগল ৬ ঘন্টা। দুপুরের খাবার খেয়ে সুজা ভাইয়ের বাসায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। বিকালে গেলাম পাড়া বেড়াতে। কালীপুজোর জন্য কৈবল্যধাম মন্দির এলাকা একেবারে জমজমাট। খুবই আনন্দঘন পরিবেশ।


২৭ অক্টোবর, ২০১১

সকাল-সকালই ঘুম ভাঙ্গলো। আজকের লক্ষ্য কক্সবাজার। ৭:৩০টায় চাকা ঘুরতে শুরু করল। কৈবল্য ধাম থেকে নতুন ব্রীজ যাবার খুব সহজ রাস্তা বলে দিলেন সুজা ভাই। রাস্তাটি অসাধারণ সুন্দর। চিটাগাং শহরের ভিতর পাহাড়ের মাঝ দিয়ে চলে গেছে। পাহাড়ি জঙ্গল দুপাশে, আবার সেই জঙ্গলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারও দেখা গেল। সত্যি, সেগুলো টাইগারই ছিল, তবে কৃত্রিম! একটি দোতলা রাস্তাও পেলাম পাহাড়ের গা ঘেঁষে। ভালই লাগল।এই পাহাড়ি রাস্তাই ঢাকার থেকে চিটাগাংকে একটু আলাদা করে রেখেছে – নয়তো পরিবেশ, দালান কোঠা সব অনেকটা ঢাকার মতোই। ১৬ কিমি পথ অতিক্রম করতে হল নতুন ব্রীজের দেখা পেতে। বাসে করে যাওয়ার সময় অনেকবার দেখেছি এই ব্রীজটি। সত্যিই খুব সুন্দর। ব্রীজে কিছু ছবি তুলে আবার ছুটলাম আমার পথে। পথ আজ ১৬০ কিমি-র। এই রাস্তায় অনেকবার বাসে করে গিয়েছি কিন্তু তারপরও অচেনা লাগছে, সব কিছু নতুন মনে হচ্ছে। কারণ যতবারই যাওয়া হয় সেটা রাতে আর ঘুমিয়েই পার হয়ে যাই পুরো যাত্রা। কিন্তু এখন আমি সাইকেলে তাই ঘুম তো দূরে থাক চোখ খুলে অনেক সতর্কভাবে চলতে হচ্ছে – প্রচুর গাড়ি এই রাস্তায়। ১১১ কিমি বাকি বলছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মাইল ফলক। ঘড়িতে তখন ১০:৩৬ মিনিট। ৩ ঘন্টায় চালিয়ে ৫২ কিমি চলে এলাম। কানার হাট পার হলাম, তার কিছু পরে পাদুয়া। এর পরেই শুরু হল বনাঞ্চলে ঘেরা পথ। রাস্তার পাশে দেখা পেলাম চুনতি অভয়ারণ্যের। পশু পাখিরা এখানে নির্ভয়ে চরে বেড়ায়। ৯৩ কিমি চালিয়ে পৌঁছলাম ইনানী রিসর্ট-এ। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে হালকা নাস্তা করে নিলাম ঘড়িতে তখন প্রায় ১টা বাজে। রাস্তা এখনও অনেক বাকি। তাই খুব বেশী সময় বিশ্রাম নেয়া যাবে না। দুই পাশে ঘন ঘন বিশাল বিশাল গাছ সারি বেঁধে দাড়িয়ে আছে। রাস্তার লেখা দেখে চোখ অধীর আশায় এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াচ্ছিল বুনোহাতি। কিন্তু কোন কিছুই দেখতে পেলাম না। তবে একটি উপকার হয়েছে। খোঁজার তালে তালে পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে চলে এলাম কক্সবাজারের কাছে। ‘স্বাগতম কক্সবাজার’ লেখা একটি সাইন বোর্ডের কাছে পৌঁছালাম বিকাল ৪.১৫ মিঃ। ১৪৩ কিমি চলেছি মিটার বলছে। এত কাছে এসে পথ যেন আর শেষ হচ্ছে না। ৫.০০ টা পৌঁছালাম কলাতলী বিচ-এ। অনেক দিনের সখ ছিল কক্সবাজারের এই এলাকাটায় সাইকেলে চলতে। আজ পূরণ হল। সন্ধ্যার সূর্য তখনও আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। তবে বেশিক্ষণ সেখানে থাকলাম না কারণ আজ হোটেলে থাকতে হবে, তার খোঁজে চললাম। লংবিচ হোটেলের কাছাকাছি আসতেই আমার মত কিছু সাইকেল আরোহী দেখতে পেলাম। অরুনাভ ও তার দল। মাথার হেলমেট দেখেই বুঝতে পেলাম আমার দলের লোক তারা। মানে তারাও সাইকেল প্রেমী। অরুনাভর সাথেও পরিচয় ফেসবুকেই। কুশল বিনিময়ের পর আমি তখনও কোন হোটেল বুক করিনি জানতে পেরে জোর করেই যেখানে উনারা উঠেছিলেন সেই সী-সান হোটেলে নিয়ে গেলেন। আমাকে কোন কথা না বলতে দিয়ে সোজা একটি রুমে ঢুকিয়ে দিলেন। পরে রাতে খাবার শেষে উনাদের সাথে কিছু গল্প করে ঘুমাতে গেলাম। এসি রুমে একটু বেশি আরামের ঘুম হল।

রাইডার্সপেন - Riderspen অভিযান

২৮ অক্টোবর
, ২০১১
সকাল ৬.৩০ এ ঘুম ভাঙ্গলো। রেডি হয়ে অরুনাভদের কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম টেকনাফের উদ্দেশ্যে। সকালের নাস্তা সেরে রওয়ানা হতে হতে ৭.৪৭ বেজে গেল। আজকের ডেস্টিনেশন টেকনাফ খুব বেশি পথ না। আর বড় কথা হচ্ছে এটা আমার পরিচিত পথ। জুন মাসে সেইফ এর ৫ জন সাইকেল আরোহীর সাথে এ পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। সে পথে আজ আমি একা চলছি। সেই মেরিন ড্রাইভ.. অনেক স্মৃতি..। ২০০৭ সালে এই রাস্তাতেই ৪২.০২ কিমি বাংলা ম্যারাথন কমপ্লিট করেছিলাম। তাছাড়াও আর তিন বার ম্যারাথন অর্গানাইজ করেছিলাম। পরিচিত পথ চলতে খারাপ লাগছিল না। এক পাশে সাগর, আরেক পাশে সারি সারি পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে ছুটে চলেছি আপন মনে। হিমছড়ি – ইনানী বিচ পার হয়ে শাপলাপুরের কাছেই একটি ব্রীজ, সাগরের খুবই কাছে। সেখানে দাঁড়িয়ে কয়েকটি ছবি তুলে রওনা হলাম। ৯৬৫ কিমি হয়ে গেল আরও ২৯ কিমি বাকি। এই পথটুকু অনেক সুন্দর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শাপলাপুর পেরোলাম ১০.৩০ মিনিটে। পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হল কিছু, আবার কিছুটা পথ গাছের ফাঁকে ফাঁকে। নোয়াখালীর নাহার ছড়ার পথে হালকা নাস্তা করে কৌতুহলী মানুষের সাথে কথা বললাম কিছুক্ষণ। আবার পথ চলা। তবে দেখতে দেখতে পথে দুরত্ব কমে এল। আর মাত্র ৫ কিমি – ৪ কিমি – ৩ কিমি – ২ কিমি – ১ কিমি – অবশেষে ০ কিমি টেকনাফ। উফ্ফ্.. দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলাম। নিজেকে বললাম – হ্যাঁ আমি পেরেছি। ঘড়িতে সময় ১২.২৮ মিনিট। মিটার বলছে ৭৩২ কিমি। সব মিলিয়ে বাংলা বান্ধা থেকে টেকনাফ ৯৯৯ কিমি হল আমার মোট দুরত্ব। সাড়ে ৬ দিনে, মোট ৬০ ঘন্টা ৪১ মিনিট বিশ্রামের সময় সহ সাইকেল চালাতে হয়েছে। আমার জানা মত এখনো পর্যন্ত এই পথে এটাই দ্রুততম অভিযান।
মোবাইলটা হাতে নিলাম। এই অভিযান -এ যাঁরা আমার পাশে ছিলেন আমার মা, নূর ভাই, সেইফ-এর সহকর্মীরা, আরও সবাই, তাঁদের কথাই শুধু মনে পড়ছিল বারবার। স্বপপূরণের এই খুশীর খবর এবার সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে তো!


# লিখেছেনঃ মহম্মদ মহিউদ্দিন
# কৃতজ্ঞতাঃ ‘আমাদের ছুটি’ বাংলা আন্তর্জাল ভ্রমণপত্রিকা

Previous Post

ক্লাসিকস রেস এবং কবলড ক্লাসিকস রেস

Next Post

দু’চাকার সনে দক্ষিণবঙ্গের পানে

রাইডার্সপেন সম্পাদক

রাইডার্সপেন সম্পাদক

প্রিয় এই দেশের মঙ্গল হবেই। সাইকেলপ্রিয় আমরা চাই, এই মঙ্গলযাত্রায় সাইকেল হোক আমাদের পরিবর্তনের বাহন। সাইকেল কাজে লাগুক সকলের কল্যানে। গড়ে উঠুক সাইকেল কমিউনিটিতে সুদৃঢ় বন্ধন। চলুক আমাদের প্রিয় সাইকেল..।

Next Post

দু’চাকার সনে দক্ষিণবঙ্গের পানে

Please login to join discussion

Recommended

ক্রসকান্ট্রির ডায়েরী ; শিবচর থেকে বরিশাল

3 বছর ago

ফ্লুরিয়ানের বাংলাদেশ ভ্রমণ

4 বছর ago

Trending

জার্নি টু দি মাওয়া ফেরি ঘাট ফর ইলিশ

5 বছর ago

সারাসেন টাফট্র্যাক্স ম্যানস রিভিউ

5 বছর ago

Popular

টেকনাফ থেকে কলকাতা – দুই চাকায় পাড়ি দিলেন ৮০২ কিলোমিটার

4 বছর ago

জার্নি টু দি মাওয়া ফেরি ঘাট ফর ইলিশ

5 বছর ago

সারাসেন টাফট্র্যাক্স ম্যানস রিভিউ

5 বছর ago

মৌডুবি থেকে আগুনমুখা নদীর তীর ধরে কাটাখালির পথে আমরা

5 বছর ago

সাইকেলে ২৪ ঘন্টায় ৫০০ কিলোমিটার!

5 বছর ago
  • স্যোশাল মিডিয়াতে ফলো করুন

© রাইডার্সপেন ২০১৭ – ২০২০
সম্পাদক ও প্রকাশক : হাফিজুল ইসলাম নীরব
১৩৪১/২ পূর্ব শেওড়াপাড়া (৫ম তলা) | রানওয়ে রোড, কাফরুল, ঢাকা – ১২০৮ । ফোন : +৮৮০১৫৩৩৩৫৪৮২৭ (টেকনিক্যাল) |
ইমেইল: editor@riderspen.com

© ২০২০ রাইডার্সপেন স্বত্ত্ব সংরক্ষিত- ওয়েবসাইট নির্মাণ কোডসপাজল

  • ডিসক্লেইমার
  • গোপনীয়তার নীতিমালা
  • বিজ্ঞাপন
  • যোগাযোগ
No Result
View All Result
  • প্রথমপাতা
  • গ্যারেজ
    • মেকানিক টুকিটাকি
    • সাইকেল শপ
    • সাইকেল রিভিউ
    • সাইকেল গুরু
  • লাউঞ্জ
    • পাঠকের গল্প
    • সাইকেল চিরকুট
    • সাইকেল কমিউনিটি
  • বাইকট্যুরিং
    • বাইকট্যুরিং বাংলাদেশ
    • বাইকট্যুরিং আন্তর্জাতিক
    • ট্যুর রুটপ্ল্যান
    • ক্রসকান্ট্রি বাংলাদেশ
    • ক্রসকান্ট্রি আন্তর্জাতিক
  • স্পোর্টস
    • সাইকেল রেস
    • ষ্ট্যান্ট
    • সাইক্লিং বিচিত্রা
  • প্রিয় সাইক্লিষ্ট
  • আমরা

Copyright © 2012 - 2017, JNews - Premium WordPress news & magazine Jegtheme.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Create New Account!

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In

Add New Playlist