“মোহাম্মদ আবু ফয়সাল খান। ৯০ এর দশকে দুঃসাহসী হয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন । সাইকেলে বিশ্বভ্রমণের অভিপ্রায়ে। আমরা সেই সময়ের কথা বলছি, যে সময় এইরকম কোন স্বপ্নকে পাগলামী বলেই মনে হতো। তিনি আমাদের শুনিয়েছেন তার সেই সময়গুলোর ধারাবাহিক লগ, ভ্রমণের গল্প…। তারচোখ দিয়ে আমরা দেখতে চেয়েছি সেইসময়ের স্বপ্নপাগল একজন সাইকেলপ্রিয় মানুষের অনুভূতি। রাইডার্সপেনের পাঠকদের জন্য এবার থাকছে ২য় পর্ব। “
সাইকেল ভ্রমনের প্রথম ধাপ ; সরকারী অনুমোদন আমার হাতে
প্রেসিডেন্ট রোভার স্কাউট ( পি আর এস) এওয়ার্ড টি পেতে হলে অনেক গুলো স্তর পেরুতে হয়। তার মধ্যে একটি হলো হাইকিং। হাইকিং আমার সাইকেল ভ্রমনের পথকে আরো গতিশীল করে দিলো। আরিফ এই পি আর এস এওয়ার্ডটির শেষ ধাপ হাইকিং করার জন্য প্রস্তুত। হাইকিং এর জন্য 100 কিলোমিটার পায়ে হেটে অথবা 400 কিলোমিটার বাইসাইকেলে পাড়ি দিতে হবে। আরিফ এর সাথে সিদ্ধান্ত হলো ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবো। ওখান থেকে ফিরেই আমরা সার্ক ট্যুরের প্রস্ততি নিবো।
এখন প্রস্তুতির পালা
ঢাকা কলেজের রোভার স্কাউট ডেনে মিটিং এ চুড়ান্ত হলো আমরা সার্ক ট্যুর করবো। সে জন্য আমাদের সরকারী অনুমোদন জি ও ( Government Order) লাগবে।
ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপ্যাল নাজিমুদ্দিন সারের স্বাক্ষরিত চিঠি নিয়ে সোজা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হারুন অর রশীদ সাহেবের কাছে চলে গেলাম। আমাদের সব কথা শুনে তিন দিন পরে যেতে বললেন। পাচদিন পরে সচিবালয়ে গিয়ে হারুন অর রশিদ সাহেবের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। দুপুরের পর মিটিং শেষ করে চেয়ারে বসলেণ। আমাদের দেখেই হাসি দিয়ে বললেন তোমরা গত কাল আসার কথা ছিল।এই বলে জি ও এর তটি কপি দিলেন যার একটি আমার , একটি আমার নামে, একটি আরিফের নামে অপরটি প্রিন্সিপ্যাল সারের নামে ইস্যু করা হয়েছে। জি ও এর কপি আরো পাঠানো হয়েছে পাাসপোর্ট অথরিটিকে, জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে, ফরেন এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক ও কাষ্টমস বিভগ বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ বরাবর।
দ্বিতীয় ও সবচেয়ে দীঘসময়ের কাজটি তিন দিনে হয়ে গেলো। জি ও এর কপিটি হাতে নেওয়ার পর মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সব একদিকে চলে যাচ্চে আর আমি অন্যদিকে চলে যাচ্ছি। আনন্দে আমি কাপছি। সরকারী অনুমোদন আমার হাতে। আমায় আর ঠেকায় কে। সিনিয়র সহকারী সচিব হারুন অর রশীদসাহেব কে সালাম করে নীচে নেমে এলাম।
প্রানপনে প্যাডেল চালালাম ঢাকা কলেজ অভিমুখে। মনে হয়ে উড়ে চলে এলাম । ঢাকা কলেজে ঢুকে সোজা উত্তর ছাত্রাবাসে । আরিফ তথন লাঞ্চ করছে। আমার হাসি দেখে আরিফ বুঝতে পেরেছে আমি জি ও নিয়ে এসেছি।
–কঙ্গ্রচুলেশন ফয়সাল ভা্ই।
আলতাফ, লিটন , অর্পন সহ আরো অনেকেই লাঞ্চ করছে। লাঞ্চ সেরে প্রিন্সিপাল স্যার এর বাসায় গিয়ে স্যারের জি ও কপিটি দিয়ে রোভোর ডেনে চলে এলাম। প্রতিদিন ক্লাস শেষে রোভার ডেনে আমরো মিলিত হলাম। আরিফ সবােইকে মিস্টি খাওয়ালো ।
খাওয়া দাওয়া শেষে রুবেলের গান । রুবেল আমাদের স্কাউট দলের সদস্য। রুবেল মানে হেন তেন রুবেল নয়্ । সে আমাদের দেশের সেরা শিল্পী এস ডি রুবেল। রুবেলের পুরো নাম হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন না। তার পুরো নাম সুশান্ত কুমার ধর রুবেল। এস ডি রুবেল আমাদের সকলের সিদ্ধান্তের নাম। এ নামটি তার প্রথম গানের এলবামে ব্যবহৃত হয়। সেই থেকে আমাদের রুবেল এস ডি রুবেলে পরিচিত হলেন। ওর সেই এলবামের সেরা গান ছিল- জ্বালাতে জ্বালাতে তুমি পুড়িয়ে দিয়েছো হৃদয় — আর দিয়ো না জ্বালা ———— মিছে ছলনা আর করো না তুমি আমাকে নিয়ে।
গান শেষে সেলিম উল্লাহ খন্দকার স্যার , রফিক স্যার বিদায় নিলেন। খুশির জোয়ারে ভাসতে ভাসতে আমিও ফার্মগেট বড়বোনের বাসার উদ্দেশ্যে প্যাডেল মারতে লাগলাম।
# চলবে
# লিখেছেনঃ মোহাম্মদ আবু ফয়সাল খান
# ছবি কৃতজ্ঞতাঃ লেখক